রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যবসা-বিনিয়োগ। বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধ নিয়ে রপ্তানি বাজারেও নানা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা- সক্ষমতাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। গত আট মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট ক্রমেই বেড়েছে। এই সংকট এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে অবিশ্বাস বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা ও সংসদ সদস্য প্রার্থী জনাব মাহবুব চৌধুরী।
শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোয় পুরো শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এর আগে ২০২৩ সালেও শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। এবারের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা। গ্যাসের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে টিকা কঠিন শিল্প খাত। নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানও পড়বে ঝুঁকিতে। রপ্তানি শিল্পেে ও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা দেখছেন তিনি।
ঋণের উচ্চ সুদ, জ্বালানির উচ্চমূল্য, অতিমূল্যায়িত ডলার। খুঁড়িয়ে হাঁটছে হাফ ডজন ব্যাংক। আমানত পেতে উচ্চ সুদ হাঁকাচ্ছে অনেকে। তার পরও তেমন সাড়া মিলছে না। সরকার পরিবর্তনের পর ১৪টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে তারল্য সহায়তা। এতেও কিছু ব্যাংক এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যকে বিশ্বাস করছে না। তাদের বিরোধ ঐক্যের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। আমরা যদি আট মাসের শাসনামল বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব যে আমাদের জুলাই বিপ্লবের মূল আকাঙ্ক্ষা এখন রীতিমতো হতাশায় পরিণত হয়েছে। ব্যবসা বিনিয়োগে সংকট বাড়ছে বলে এই প্রতিবেদককে বলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রাত্তন কেন্দ্রীয় নেতা, ৯০'র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট নগরীর আব্দুল গফুর স্কুল এন্ড কলেজ গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি, বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ ২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন গ্রহণকারী বিএনপির এই নেতা।
এদিকে দেশের বেসরকারি খাতভিত্তিক থিংকট্যাংক বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে যখন বৈশ্বিক কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি বিদ্যমান, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, রপ্তানি বাজারে অস্থিরতা, বিদ্যুৎ ঘাটতি, জ্বালানির অনির্ভরযোগ্যতা, যুক্তরাষ্ট্রের ভারসাম্যমূলক শুল্কারোপ ইত্যাদি চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই করছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগের অপেক্ষায় থাকা শিল্প খাত এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেকটাই নিরুৎসাহী হবে।
মূলধনী যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী পণ্য, পেট্রোলিয়াম, শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য একটি অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে বিবেচিত। পাশাপাশি এগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উল্লিখিত পাঁচ সূচকের মধ্যে তিনটিই নেতিবাচক।